Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

১৫১ বার বিয়ে! ‘সিরিয়াল লাভার’ জিয়োভানি উইপিয়োটোর প্রেম, প্রতারণা ও পতনের বিস্ময়কর কাহিনি

১৫১ বার বিয়ে! ‘সিরিয়াল লাভার’ জিয়োভানি উইপিয়োটোর প্রেম, প্রতারণা ও পতনের বিস্ময়কর কাহিনি

সিরিয়াল বিয়েবাজ, Giovanni Wipioto marriage scam, serial lover fraud, wedding theft cases, US marriage fraud, romantic conman history


প্রেম, বিয়ে, সংসার—এই শব্দগুলি সাধারণ মানুষের জীবনে সুখের প্রতীক হলেও জিয়োভানি উইপিয়োটোর জীবনে ছিল নিছক ব্যবসার কৌশল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মানো ইতালীয় বংশোদ্ভূত এই ব্যক্তি গড়েছিলেন এমন এক প্রতারণার ইতিহাস, যা শুনলে আজও বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে। প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী, তিনি অন্তত ১০৫ জন মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তাঁর নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সেই সংখ্যা ছিল ১৫১!

জিয়োভানির আসল ব্যবসা ছিল ফ্লি মার্কেটের। কিন্তু সেই ব্যবসার আড়ালে চলত প্রেম ও বিবাহের নাটক। আত্মবিশ্বাসী মুখ, মিষ্টি কথাবার্তা, ভুয়ো পরিচয়—এই ছিল তাঁর ‘অস্ত্র’। কখনও নিজেকে বিদেশি ব্যবসায়ী, কখনও জমিদার, কখনও অভিজাত পরিবারের সন্তান বলে পরিচয় দিতেন। পরিচয়ের পরেই আসত বিয়ের প্রস্তাব। কেউ রাজি না হলে চলত দিনের পর দিন সাজানো প্রেমের অভিনয়।

বিয়ের পরের দৃশ্য ছিল আরও ভয়ংকর। ফুলশয্যার রাতে স্ত্রীর মন জয় করে, ঘুমিয়ে পড়ার পরই গহনা, নগদ টাকা, মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গায়েব হয়ে যেতেন জিয়োভানি। নববিবাহিতা স্ত্রীকে রেখে তিনি উধাও হয়ে যেতেন, আর সেই চুরি করা জিনিস বিক্রি করতেন ফ্লি মার্কেটে—যেন পুরোনো জিনিসের স্বাভাবিক বেচাকেনা চলছে।

১৯৮১ সালের নভেম্বরে প্যাট্রিসিয়া অ্যান গার্ডিনার নামের এক মহিলা মাত্র আট দিনের পরিচয়ে বিয়ে করেন জিয়োভানিকে। বিয়ের পর ৩৬,০০০ ডলার এবং বাড়ির সমস্ত মূল্যবান জিনিস নিয়ে উধাও হয়ে যান তিনি। এরপর শ্যারন ক্লার্ক নামের আরেক মহিলার সঙ্গে বিয়ে করেন, যাঁকে তিন সপ্তাহ পর এক হোটেলে কপর্দকহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এমনকি তাঁর জুতো পর্যন্ত চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন জিয়োভানি। কিন্তু শ্যারন হাল ছাড়েননি। প্রায় ১০,০০০ মাইল ঘুরে অবশেষে ফ্লোরিডায় নিজের প্রতারক স্বামীকে খুঁজে বের করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

১৯৮৩ সালে অ্যারিজোনায় শুরু হয় জিয়োভানির বিচার। আদালতে প্রমাণিত হয় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতারণা ও বহুবিবাহের অধিকাংশ অভিযোগই সত্যি। তাঁকে ২৮ বছরের কারাদণ্ড এবং বহুবিবাহের জন্য আরও ৬ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। সঙ্গে ৩ লক্ষ ৩৬ হাজার ডলারের জরিমানাও ধার্য হয়। কিন্তু সাজা ঘোষণার সময়ও তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন, আদালতে দাঁড়িয়ে বুক ফুলিয়ে দাবি করেন, “১০২ জন নয়, আমি ১৫১ জন মহিলাকে বিয়ে করেছি!”

তবে এই অহংকার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ৬১ বছর বয়সে অ্যারিজোনার কারাগারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিয়েবাজ’-এর।

জিয়োভানি উইপিয়োটোর জীবন যেন এক সিনেমার চিত্রনাট্য—প্রেম, প্রতারণা, নাটক, এবং শেষ পর্যন্ত পতন। তাঁর কাহিনি আজও বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়, এক ভয়ংকর উদাহরণ—যেখানে ভালোবাসার মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল লোভ আর অপরাধ।

إرسال تعليق

0 تعليقات

Ad Code