Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

২১ জুলাই ধর্মতলা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন দিনহাটার চৌধুরীহাটের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী

২১ জুলাই ধর্মতলা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন দিনহাটার চৌধুরীহাটের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী

Uttam Kumar Brajbasi, a resident of Chowdhuryhat, Dinhata, will be present at the Dharmatala stage on July 21.


বংশ-পরম্পরায় দিনহাটার বাসিন্দা, অথচ ৫০ বছর বয়সেও কোচবিহারের বাইরে যাননি, এমন এক ব্যক্তিকে অবৈধ অনুপ্রবেশের নোটিশ পাঠিয়েছিল আসাম সরকার। দিনহাটার চৌধুরীহাটের সাদিয়ালের কুঠির উত্তম কুমার ব্রজবাসী নামের ওই ব্যক্তি এনআরসির জালে পড়েছেন। চলতি মাসের ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে না পারলে তাকে অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্নিত করা হবে বলেও উত্তমের কাছে পাঠানো নোটিশে উল্লেখ ছিল। এই ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর তীব্র নিন্দা করেছেন।


উত্তম কুমার ব্রজবাসী জানান, গত জানুয়ারি মাসে পুলিশ প্রশাসন মারফত তার বাড়িতে একটি এনআরসি সংক্রান্ত চিঠি আসে। প্রতিবেশীদের দেখালে তিনি জানতে পারেন যে আসাম সরকার তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে এই নোটিশটি পাঠিয়েছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে যে তিনি নাকি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে অবৈধভাবে অসম সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছেন এবং দিনহাটা মহকুমা চৌধুরীহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের সাদিয়ালের কুঠিতে বসবাস করছেন। নোটিশে আরও উল্লেখ রয়েছে যে পুলিশ ভেরিফিকেশনে তিনি বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি, তাই তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।


উত্তম কুমার ব্রজবাসীর আইনজীবী অপূর্ব সিনহা এই বিষয়ে বলেন, "এনআরসি সংক্রান্ত এই কেসটি অসম সরকার ২০১৫ সালে শুরু করে, কিন্তু সেই চিঠি ৯ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে কোচবিহার জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে পৌঁছায়। পরবর্তীতে জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে উত্তম কুমার ব্রজবাসী সেই এনআরসি সংক্রান্ত চিঠিটি পান।"


আইনজীবী অপূর্ব সিনহা আরও অভিযোগ করে বলেন, যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ সরকার এনআরসিকে মান্যতা দিচ্ছে না, সেখানে প্রতিবেশী অসম রাজ্যের এনআরসি সংক্রান্ত চিঠি কি করে জেলা পুলিশ সুপার রিসিভ করেন! তার আরও অভিযোগ, তার মক্কেলকে বৈধ ভারতীয় নাগরিক প্রমাণ করার জন্য তারা ইতিমধ্যে যে সমস্ত কাগজপত্র পেশ করেছে, আসাম সরকার সেগুলি বেশিরভাগই নাকচ করে দিয়েছে। এখন আসাম সরকার দাবি করছে, ১৯৬৬ সাল থেকে কন্টিনিউ ভোটার লিস্টের তালিকায় ওই ব্যক্তির নাম আছে কিনা। কিন্তু জেলা প্রশাসন এমনকি রাজ্য প্রশাসনও ১৯৬৬ সালের পর থেকে ভোটার তালিকা দিতে পারছে না। অপূর্ব সিনহার কথায়, চলতি মাসের ১৫ তারিখে কাগজপত্র জমার শেষ তারিখ রয়েছে, এর মধ্যে কাগজপত্র যদি রাজ্য সরকার দিতে না পারে তাহলে তার মক্কেলকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।


এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "আমি হতবাক ও অত্যন্ত বিচলিত হয়েছি জেনে যে, কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সম্প্রদায়ের উত্তম কুমার ব্রজবাসীকে অসমের ফরেনার্স ট্রাইবুনাল, এনআরসি নোটিশ জারি করেছে। গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই বাংলার বাসিন্দা। তাঁর বৈধ পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও, তাঁকে 'বিদেশি/অবৈধ অনুপ্রবেশকারী' সন্দেহে হয়রানি করা হচ্ছে।"


তিনি আরও বলেন, "এটি আমাদের গণতন্ত্রের উপর একটি পরিকল্পিত আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটিই প্রমাণ করে যে অসমে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, যেখানে তাদের কোনো ক্ষমতা বা অধিকার নেই। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ভয় দেখানো, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া এবং নিশানা করার একটি পূর্বপরিকল্পিত নোংরা চক্রান্ত চলছে। এই অসাংবিধানিক আগ্রাসন জনবিরোধী এবং এটি বিজেপির বিপজ্জনক ষড়যন্ত্রকে দিনের আলোর মত স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, গণতান্ত্রিক সুরক্ষাকে ধ্বংস করে বাংলার মানুষের পরিচয় মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি।"


এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, ২১ জুলাই ধর্মতলা মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন দিনহাটার চৌধুরীহাটের বাসিন্দা উত্তমকুমার ব্রজবাসী। আজ কলকাতায় পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। উত্তমকুমার ব্রজবাসীর ঘটনাটি রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব ইস্যুতে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code