আমেরিকা-পাকিস্তান তেল চুক্তি, ভারতের ওপর শুল্ক আরোপ ও ব্রিকস নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য
ওয়াশিংটন, ডি.সি. ৩১ জুলাই, ২০২৫ – মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি কূটনীতিতে এক নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন। পাকিস্তানের "বিশাল" তেল ভান্ডার যৌথভাবে উন্নয়নের জন্য একটি নতুন জ্বালানি অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ট্রুথ সোশ্যালে (Truth Social) পোস্ট করা এই ঘোষণাটি আসে এমন এক সময়ে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক এবং অতিরিক্ত জরিমানা আরোপ করেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি ভারতের উচ্চ বাণিজ্য বাধা এবং রাশিয়া থেকে অব্যাহতভাবে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনাকে দায়ী করেছেন।
মূল বিষয়গুলো
- আমেরিকা-পাকিস্তান তেল চুক্তি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান যৌথভাবে পাকিস্তানের অব্যবহৃত তেল ভান্ডার অনুসন্ধান ও উন্নয়নে কাজ করবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দ্রুতই একটি আমেরিকান তেল কোম্পানি নির্বাচন করা হবে।
- ভারতে তেল বিক্রির সম্ভাবনা: একটি অপ্রত্যাশিত মন্তব্যে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন যে, ভবিষ্যতে পাকিস্তান ভারতে তেল বিক্রি করতে পারে। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসবাদ-সংক্রান্ত উত্তেজনার কারণে ২০১৯ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য স্থগিত রয়েছে।
- ভারতের ওপর শুল্ক: ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এই নতুন শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের উচ্চ বাণিজ্য বাধা এবং রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনাকে উল্লেখ করেছে।
- ব্রিকস-এর সমালোচনা: ট্রাম্প ব্রিকস (BRICS) জোটের তীব্র সমালোচনা করে এটিকে "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী দেশগুলোর একটি জোট" বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, এই জোট ডলারের আধিপত্যকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক এই শুল্ক আরোপের বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, সরকার নতুন শুল্কের প্রভাবগুলো খতিয়ে দেখছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তির জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা এখনো চলছে, যার ষষ্ঠ দফা বৈঠক আগস্টের শেষ দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
তীব্র উত্তেজনা সত্ত্বেও, ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে ভারত শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর জন্য প্রস্তুত আছে। তবে তিনি কোনো চুক্তির বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেননি। তিনি বলেছেন, "আমরা দেখব তারা কী করে।" তার মন্তব্যে মনে হচ্ছে, এই সপ্তাহের শেষে এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপগুলো একটি বৃহত্তর কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়:
- জ্বালানি কূটনীতি: আমেরিকা-পাকিস্তান তেল চুক্তিটি চীনের আঞ্চলিক প্রভাব, বিশেষ করে চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (CPEC)-কে প্রতিহত করার একটি চেষ্টা হতে পারে।
- ডলারের সুরক্ষা: ব্রিকস নিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা তার প্রশাসনের সেই অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো থেকে ডলারের ওপর আসা হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে।
- ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক: ২০২২ সাল থেকে ভারত তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ।
যদিও আমেরিকা-পাকিস্তান তেল চুক্তির বিনিয়োগের পরিমাণ ও সময়সীমা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় অর্থনৈতিক উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য ওয়াশিংটনের ইচ্ছার ইঙ্গিত দেয়। ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক মেরুকরণের এই সময়ে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন এবং বাণিজ্যিক বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।
ট্রাম্পের ভাষায়, "এর একটি অংশ ব্রিকস এবং অন্য অংশ বাণিজ্য।" আগামী সপ্তাহগুলোতে বোঝা যাবে যে কূটনীতি এই ক্রমবর্ধমান বিভাজনকে কমাতে সক্ষম কিনা।
0 تعليقات
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊