প্রচলিত ধারণা ভেঙে দিল গবেষণা! শুক্রাণু ছোটে না, বিজয়ীকে বেছে নেয় ভিম্বানুই
ডিম্বাণু আর শুক্রাণুর মিলনের নেপথ্য কাহিনী সকলের জানা। নিঃসৃত লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু প্রতিযোগিতায় ছোটে, যে শুক্রানু আগে পৌঁছায় সেই বিজয়ী, প্রবেশ করে ডিম্বানুতে। অপেক্ষাকৃত দুর্বল শুক্রাণুরা আগেই পিছিয়ে পড়ে। একে একে বাতিল হতে হতে শেষমেশ সকলকে পিছনে ফেলে ডিম্বাণুর বাইরের পর্দা ভেদ করে প্রবেশ করে ‘বিজয়ী’ শুক্রাণু! আর এই দুইয়েল মিলনে তৈরি হয় প্রাণ। কিন্তু এতদিনের এই প্রচলিত ধারনায় বাঁধ সাধলো নয়া গবেষণা।
এর আগেও অবশ্য বেশ কয়েক বার গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, প্রতিযোগিতায় নয়, বরং ‘যোগ্য’ শুক্রাণুকে বেছে নেয় ডিম্বাণুই। সম্প্রতি আরও একি বিষয় উঠে এল। বিজ্ঞানবিষয়ক লেখিকা স্টার ভার্টনের সদ্য-প্রকাশিত বই ‘দ্য স্ট্রংগার সেক্স: হোয়াট সায়েন্স টেল্স আস অ্যাবাউট দ্য পাওয়ার অফ দ্য ফিমেল বডি’তে এই বিষয়ে তুলে ধরেছেন। বইয়ে এটি ছাড়াও নারীদেহ সম্পর্কে আরও নানা প্রচলিত ‘ভুল’ ধারণা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
নারী শরীর অত্যন্ত নির্বাচিত পথে হাঁটে। জন্মের সময় লক্ষ লক্ষ ডিম্বাণু থাকলেও, প্রজননকালে মাত্র ৩০০-৪০০টি ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার যোগ্য হয়ে ওঠে এবং প্রতি মাসে মাত্র একটি ডিম্বাণু প্রস্তুত হয়। এটি "গুণমানের খেলা"। আবার পুরুষদের প্রজনন কৌশল অনেকটাই মাছ বা উভচর প্রাণীদের মতো। তারা লক্ষ লক্ষ শুক্রাণু তৈরি করে, যা মূলত "সংখ্যার খেলা"। এখানে শুক্রাণুর গুণমানের চেয়ে সংখ্যার উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্ত্রী স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে নিষেক হয় তাদের দেহের অভ্যন্তরেই। অথচ উভচর, সরীসৃপ কিংবা মাছেদের ক্ষেত্রে তা নয়। সে কারণেই এই অবশ্যম্ভাবী সংখ্যানিয়ন্ত্রণ। তবে মাছ কিংবা ব্যাঙেদের ক্ষেত্রেও যে বিপুল সংখ্যক অপত্যের সকলেই বেঁচে থাকে তা নয়। প্রতিকূল পরিবেশ, শিকারীর নজর, জলের লবণাক্ততা, দূষণের মতো নানা পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে স্থির হয়, শেষমেশ কে কে বেঁচে থাকবে আর কে মারা যাবে। স্পষ্টত, উভয় কৌশলই কার্যকর। স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিষয়টা একই রকম। এখানে কেবল কোন অপত্য বেঁচে থাকবে আর কে থাকবে না, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গর্ভধারণের আগেই নিয়ে ফেলে নারীশরীর! ফলে স্বভাবতই কোন বিশেষ ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুর মিলন হবে, তা-ও স্থির হয়ে যায় নিষেকের আগেই।একটি বা দু’টি সন্তান জন্মের প্রশ্ন ওঠে, তখন এটি নিশ্চিত করাও প্রয়োজন হয়ে পড়ে যে সেই সন্তানের বেঁচে থাকার সর্বোত্তম সম্ভাবনা রয়েছে কি না। সে কারণেই চলে ‘যোগ্য’ শুক্রাণু বাছাই!
নিষেক প্রক্রিয়াটি শুক্রাণুর দৌড় প্রতিযোগিতা নয়, বরং ডিম্বাণুর দ্বারা পরিচালিত একটি সূক্ষ্ম এবং বুদ্ধিদীপ্ত নির্বাচন। এই আবিষ্কার কেবল একটি প্রচলিত ভুল ধারণাকেই ভাঙেনি, বরং নারীদেহ ও তার প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের অভাবকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তবে এ ধারনা নতুন কিছু নয়। আর আগেও একাধিকবার ‘আবিষ্কৃত’ হয়েছে বহু বার। ১৯৯১ সালে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছিলেন এমিলি মার্টিন তাঁর গবেষণাপত্র ‘দ্য এগ অ্যান্ড দ্য স্পার্ম: হাউ সায়েন্স হ্যাজ কন্সট্রাক্টেড আ রোম্যান্স বেস্ড অন স্টিরিয়োটিপিক্যাল মেল-ফিমেল রোল্স’-এ। মেয়েরা আজও ‘দুর্বলতা’, ‘নিষ্ক্রিয়তা’-র নামান্তর। তাই কখনও কখনও চিরাচরিত ধারণার বিপরীতে জৈবিক, বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা গ্রহণ করাও কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ’৯০-এর দশকের আবিষ্কার ‘পুনরাবিষ্কৃত’ হয় ২০১৭ সালে। ২০১৯ সালে ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল পড়ুয়া আবার সেই তথ্যই আবিষ্কার করেন ‘নতুন’ গবেষণায়। প্রবন্ধের মুখবন্ধে লেখা হয়, ‘‘এ এক অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার!’’
0 تعليقات
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊