এক রাতেই ১৭ জায়গায় মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি, মৃত ১৮, আহত ৩৪, উদ্ধার ৩৩২

Himachal cloudburst 2025, হিমাচল মেঘভাঙন ২০২৫, হিমাচল বন্যা খবর, হিমাচল প্রাকৃতিক দুর্যোগের আপডেট,


এক রাতেই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেঁপে উঠল হিমাচল প্রদেশ। সোমবার রাতে রাজ্যের অন্তত ১৭টি স্থানে মেঘভাঙা বৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মান্ডি জেলায় ১৫টি এবং কুল্লু ও কিন্নৌর জেলায় একটি করে। এই দুর্যোগে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮ জন, নিখোঁজ রয়েছেন ৩৪ জন, এবং ৩৩২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মান্ডি জেলা। এখানে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। থুনাগ মহকুমার কুকলায় মেঘভাঙনের ফলে আটটি ঘর ভেসে যায়, নিখোঁজ হন ২৪ জন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৯ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। গোহর মহকুমার সায়াঞ্জে দুটি ঘর ভেসে গিয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়। বারায় একটি ঘর ধসে পড়ে ছয়জন চাপা পড়েন, যাদের মধ্যে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

কারসোগ মহকুমার কুট্টি নালায় চারজন নিখোঁজ রয়েছেন, একজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। এখানেই ছয়টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাটিকরি এলাকায় ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। কেলোধরে ধসে পড়া বাড়ি থেকে আটজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মান্ডি শহরের প্যালেস কলোনি, তরনা ও ডায়েট এলাকা থেকে ৫৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।

জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী (NDRF) ও রাজ্য দুর্যোগ বাহিনী (SDRF) উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। টিকরি প্রকল্প, কারসোগ কলেজ, রিক্কি গ্রাম, সুজনপুরের বল্লাহ গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। পান্ডোহ জলাধারে জলস্তর বিপদসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে, ফলে বাঁধ থেকে জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃষ্টির কারণে কাংড়া ও কুল্লুতে চারটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভুন্টার বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা বন্ধ রয়েছে। কুলুর আনি বৈহনার কার্শা ড্রেনে মেঘভাঙনের কারণে জাতীয় সড়ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হামিরপুর জেলার সুজনপুর মহকুমার বল্লাহ গ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে ৫১ জন আটকে পড়েন, যাদের পরে উদ্ধার করা হয়।

শুধুমাত্র মান্ডি জেলাতেই ২৪টি ঘরবাড়ি ও ১২টি গোশালা ধ্বংস হয়েছে। ৩০টি পশুপাখি মারা গেছে। বহু সেতু ও রাস্তা ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে ৯৯৪টি ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে যাওয়ায়। পানীয় জলের শতাধিক প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী ছয় দিন ধরে রাজ্যে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে ৫ থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মান্ডি, কুল্লু, হামিরপুর, শিমলা, সিরমৌর ও সোলান জেলায় বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ৩ ও ৪ জুলাই রাজ্যজুড়ে হলুদ সতর্কতা জারি থাকবে।

রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। জনগণকে নদী ও ঝর্ণার কাছাকাছি না যাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।