গবাদিপশুর মৃত্যুর পরেই জ্বর-শ্বাসকষ্টে পরপর এক বাড়িতেই তিন জনের মৃত্যু সিতাইয়ে! আতঙ্ক চারিদিকে
কোচবিহার জেলার সিতাই ব্লকের ব্রহ্মত্তর চাত্রা গ্রামে এক পরিবারে পরপর তিন সদস্যের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চরম উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মাত্র ২২ দিনের ব্যবধানে একই পরিবারের স্বামী ও দুই স্ত্রীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা এলাকা। মৃতরা হলেন, জোনাকু বর্মন (৬৩), তাঁর বড় স্ত্রী ক্ষীরবালা বর্মন (৫৭) এবং ছোট স্ত্রী জয়ন্তী বর্মন (৪৫)।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ এপ্রিল প্রথম মৃত্যু হয় ছোট স্ত্রী জয়ন্তী বর্মনের। এরপর ২৫ এপ্রিল মারা যান পরিবারের কর্তা জোনাকু বর্মন। সর্বশেষ ১৪মে প্রাণ হারান বড় স্ত্রী ক্ষীরবালা বর্মন। প্রত্যেকেরই মৃত্যুর আগে দেখা গিয়েছিল জ্বর ও শ্বাসকষ্টের উপসর্গ। চিকিৎসার জন্য প্রথমে সিতাই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতাল ও কোচবিহার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি কাউকেই।
মৃতদের রেখে যাওয়া দুই সন্তান রাখাল বর্মন (২৪) ও অর্চনা বর্মন (১৫) এই মুহূর্তে পরিবারে একেবারে একা এই দুই ভাই-বোন। তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় প্রতিবেশীরা।
পরিবারের এই মৃত্যুমালার ঠিক দুই সপ্তাহ আগে জোনাকু বর্মন ও তাঁর ভাইয়ের পালিত তিনটি গরু ও চারটি ছাগল কোন এক অজানা অসুখে মারা যায়। এবং একই পরিবারে তিনজন মৃত্যুর পর ১৯ মে সোমবার ওই এলাকায় মৃত পরিবারের পাশেই পরেশ চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে একটি ছাগলের মৃত্যু হয়েছে, যা নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় যুবক কামনিকান্ত জানান- সমস্যা দেখা দিলে আমরা দ্রুত ওঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাই, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
এক প্রতিবেশী পিংকি বর্মনের বক্তব্য- পরিবারে পাঁচ জন সদস্যের মধ্যে তিনজন অভিভাবকের মৃত্যু হয়েছে। এখন ওই দুই ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা চিন্তিত। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
মৃত জয়ন্তী বর্মনের ভাই জল্পেশ বর্মন বলেন- সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন, কিন্তু আমরা এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছি না কেন এমনটা হল।
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডঃ হিমাদ্রি কুমার আরি বলেন “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এখনো পর্যন্ত কোনো অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়েনি। তদন্ত চলছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
এই ঘটনার পর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যেই তিনবার এলাকায় গিয়ে পশু ও স্থানীয় লোকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে, তবে এখনও পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট রোগ সনাক্তের রিপোর্ট আসেনি বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দারা।
এদিকে, গ্রামবাসীদের মধ্যে নানা মতামত দেখা দিয়েছে, কেউ মনে করছেন এটি কোনো ভাইরাসঘটিত সংক্রমণ, আবার কেউ কেউ এটিকে মনসা ঠাকুরের “নিলা” বলে ভাবছেন।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা সুব্রত বর্মন জানান- সন্ধ্যা হলে কেউ আর কারও বাড়ি যায় না। চারদিকে একটা ভয় আর চাপা আতঙ্ক কাজ করছে।
গ্রামবাসীদের দাবি, প্রশাসন যেন দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে এবং মৃতদের পরিবারের পাশে সহানুভূতির সঙ্গে দাঁড়ায়।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊