গ্রামের মায়েদের নেতৃত্বে প্রতিরোধের মুখে সবংয়ে মদের দোকান বন্ধ
লক্ষীকান্ত মাইতি, পশ্চিম মেদিনীপুর:
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার 4 নম্বর অঞ্চল দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মশাগ্রামে সরকারি মদের দোকান খোলার প্রচেষ্টা রুখে দিল সমিতা মাইতি, রূপালী মাইতি, প্রতিমা মাইতি, উত্তরা মন্ডল, মল্লিকা বর্মন সহ শত শত মায়েরা ঝাঁটা লাঠি নিয়ে মদের দোকান অবরুদ্ধ করেন।
24 শে জুন সোমবার মশাগ্রামে মায়েদের নেতৃত্বে শিক্ষক পঙ্কজ কুমার মাইতি, শিক্ষক শিশির মাইতি, ডাক্তার রঞ্জন মাইতি, তন্ময় মাইতি, মাধব খাটুয়া এবং লক্ষীকান্ত মাইতি সকলে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ গ্রামবাসী শাসকদলের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে, সমস্ত ভয়-ভীতি ও সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে শত শত মায়েরা শিক্ষক ডাক্তার বুদ্ধিজীবী সহ গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারি মদের দোকান খোলার প্রতিবাদে এদিন সকাল থেকেই গ্রামের শীতলা মন্দির প্রাঙ্গনে জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ মিছিল সহকারে মদের দোকানের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভে শামিল হন।
এই গ্রামে এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী মহারাজ প্রতিষ্ঠিত একটি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে , রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ও তিনটি মন্দির রয়েছে এবং এই মশাগ্রামে স্বামী শিবানন্দ সরস্বতী মহারাজ প্রতিষ্ঠিত যোগা হাসপাতাল রয়েছে যেখানে দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন দুরারোগ্য ব্যাধির যোগ মাধ্যমে নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা করতে আসেন।
কেলেঘাই নদীর পাড়ে পাকা রাস্তার ধারে এই মদের দোকানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের মানুষ দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মদের দোকান খোলার প্রতিবাদে আবগারি দপ্তর, জেলাশাসক, সবং থানার বিডিও, সবং থানার ওসি, সবং এর বিধায়ক তথা রাজ্যেরমন্ত্রী ডাক্তার মানস রঞ্জন ভূঁইয়া, অঞ্চল প্রধান সহ সমস্ত জায়গায় গ্রামবাসীদের স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি দেওয়া হয়।
এতদ সত্বেও দশগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূল নেতা অনন্ত টুং এর আগে খাজুরি দশগ্রামে মদের দোকান খোলার চেষ্টা করেন কিন্তু সেখানকার গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত মশাগ্রামে মদের দোকান খোলার পরিকল্পনা করেন।
গ্রামের মায়েরা প্রশ্ন করেন লোকসভা নির্বাচনের বহু আগে থেকে জেলাশাসকসহ আবগারি দফতরে জানানো সত্ত্বেও কিভাবে উনি মদের দোকান খোলার লাইসেন্স পেলেন? সবং থানার পুলিশ প্রশাসন এলে তারা জনগণের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। মায়েরা মদের দোকানে তালা চাবি লাগিয়ে দেন। গ্রামের মানুষ কেলেঘাই ব্রিজের উপর দেহাটি দীঘা রাস্তা অবরুদ্ধ করতে চাইলে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে প্রশাসন স্বীকার করেন যেহেতু গ্রামের মানুষ চায়না, উনাদের সঙ্গে আলোচনা না করে মদের দোকান খোলা হবে না।
রাজ্যের জল সম্পদ ও ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী ডাক্তার মানস রঞ্জন ভূঁইয়া শেষ পর্যন্ত স্বীকার করেন গ্রামের মানুষ তারা চায় না তাই মশাগ্রামে আর মদের দোকান খোলা হবে না।
আন্দোলনকারীরা বলেন দলমত নির্বিশেষে যেভাবে গ্রামের মায়েরা ঝাঁটা এবং লাঠি নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন তাই প্রশাসন বাধ্য হয়েছেন মদের দোকান বন্ধ করতে। কিন্তু পরবর্তীকালে চুপিসারে যদি আবারোও মদের দোকান খোলার চেষ্টা হয় তবে এই গ্রামের মানুষ কিছুতেই এই অন্যায় বরদাস্ত করবে না। আরোও বৃহত্তর আন্দোলনে শামিল হওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।
আন্দোলনকারী সমিতা মাইতি বলেন কোনভাবেই শাসকের রক্ত চক্ষুর কাছে বীরাঙ্গনা সাহসী মায়েরা কখনোই মাথানত করবে না।
আন্দোলনকারী রূপালী মাইতি বলেন আমরা সমস্ত শক্তি দিয়ে গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য মদের দোকান বন্ধ করেছি এবং আমাদের লড়াই জারি থাকবে।
সুজাতা মাইতি, মিনা মাইতিরা আরও বলেন এই গ্রামে মদের দোকান হলে আগামী প্রজন্মের কাছে আমরা কি কৈফিয়ৎ দেবো? কিছুতেই এই গ্রামের সম্মান নষ্ট হতে দেব না। বলেন আমাদের জীবন থাকতে এই গ্রামে কিছুতেই মদ জুয়ার আখড়া হতে দেব না। আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊