প্রাচীন রীতি মেনে হয়ে আসছে গঙ্গারামপুরের দূর্গাবাড়ির পুজা
জয়দীপ মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুর: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম এবং ব্যবসার সফল ও প্রতিষ্ঠিত জায়গা গঙ্গারামপুর। এই গঙ্গারামপুরের রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। পাশাপাশি রয়েছে এখানকার নয় বাজারের ক্ষীর দই, তাঁতের শাড়ি ও মাছ যা দেশ-বিদেশেও সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করার পাশাপাশি প্রশংসাও কুঁড়িয়েছে। গঙ্গারামপুর শহরের তথা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত রয়েছে দুর্গা বাড়ি পাড়া, যেখানে শতাব্দি প্রাচীন এক দূর্গা মন্দির রয়েছে যেখানে প্রতিবছর দুর্গা পুজো হয়ে আসছে প্রাচীন রীতিনীতি মানার পাশাপাশি জাকজমকপূর্ণ ভাবে।
উল্লেখ্য, জনৈক সাধু পঞ্চমুন্ডির আসন প্রতিষ্ঠা করে দুর্গাপূজার শুরু করেছিলেন। গঙ্গারামপুরের দুর্গাবাড়ি এলাকার সেই সাধু নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় পরবর্তীতে এলাকারই বাসিন্দা তথা অনুশীলন সমিতির অন্যতম সদস্য বিপ্লবী স্বর্ণকমল মিত্র ও তাঁর সতীর্থরা এই পুজো চালিয়ে যান।এই স্বর্ণকমল মিত্রর নেতৃত্বেই দুর্গাবাড়ির এই পূজো মণ্ডপেই অনুশীলন সমিতির গুপ্ত বৈঠক চলত। আর এই বিপ্লবী স্বর্ণকমল মিত্র হলেন বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুর বিধানসভার বিধায়ক বিপ্লব মিত্রের পিতা।
জানা যায় পঞ্চমুন্ডির আসনে সেই সময় দেবী দুর্গার আরাধনার মাধ্যমে বিপ্লবীরা ভারতমাতাকে পরাধীনতা ও ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্ত করার সংকল্প নিতেন। পরবর্তীতে বিপ্লবী স্বর্ণকমল মিত্র মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার সদস্যরা ও এলাকার মানুষ একই রীতিনিয়মে নিষ্ঠার সাথে আজও পূজার আয়োজন করে আসছেন। গঙ্গারামপুরের দূর্গাবাড়ির পূজোয় আজও নবমীর দিন বলি হয়ে থাকে। পুজোর তিনদিন ঘি-ভাত ফ্রাইডরাইস সহ অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীর দিন পূর্ণভবা নদীতে প্রথম দুর্গাবাড়ির প্রতিমার ভাসান দিয়ে শুরু হয় বিসর্জনের পালা। পুজোর কটা দিন বাসিন্দাদের বাড়িতে রান্না বন্ধ থাকে। সকলে মিলে পূজো প্রাঙ্গনেই এক সাথে খাওয়াদাওয়া করেন। দুর্গাবাড়ির পূজো ও প্রতিমা দেখতে গঙ্গারামপুরের বাইরেরও দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসেন। আর পূজো হাতেগোনা মাত্র দশ দিন রয়েছে তার আগেই গঙ্গারামপুরের দুর্গা বাড়ি পাড়ায় দুর্গ পুজোকে কেন্দ্র করে এলাকাসহ গঙ্গারামপুর জুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আর এই দুর্গা বাড়ির দুর্গাপুজোর প্রতিমা তৈরি ব্যস্ততা চলছে জোরকদমে। দিনরাত এক করে মৃৎশিল্পীরা ঘেমে নিয়ে প্রতিমা তৈরি করে চলেছেন। আর এই পুজোর কটা দিন দুর্গা বাড়ী পাড়ার প্রত্যেক বাসিন্দাও তার পরিবারের সদস্যা সবাই একত্রিত হয়ে নিজের পরিবারের মতন একসঙ্গে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেন শারদীয় উৎসব তথা দুর্গা বাড়ি পূজা দুর্গা পুজোকে কেন্দ্র করে। বলাই বাহুল্য দুর্গাবাড়ি পাড়ার মানুষজন এখন হাতের আঙুলের কর দিয়ে দিন গুনছেন মায়ের অপেক্ষায় কারণ মা মর্তে আসতে চলেছেন।
চলতি মাসের আগামী ১৯ তারিখে মহালয়া আর সেদিন পুণ্য তিথিতে হবে দেবীর চক্ষুদান। ব্যাস সেখান থেকে শুরু হয়ে যাবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গোৎসব। আর ষষ্ঠীর দিন থেকেই শুরু হবে মাতৃ পক্ষের সূচনা পিতৃপক্ষের অবসান হবে ও দেবী দুর্গা মর্তে অবতরণ করবেন। তারই অপেক্ষায় রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর দূর্গাবাড়ীপাড়ার বাসিন্দারা সহ সমগ্র রাজ্যের বাঙালিরা কারণ মা আসতে চলেছেন।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊