জয় বাংলা - এই চোখের রোগের পিছনে রয়েছে এক বড় ইতিহাস

joy bangla eye disease



সম্প্রতি রাজ্যে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে চোখের অসুখ কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis), যার পোশাকি নাম জয় বাংলা (joy bangla)। বর্ষাকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সর্দি জ্বরের সঙ্গে দেখা দেয় নতুন উপসর্গ কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis), জয় বাংলা (joy bangla) নামেই সুপরিচিত এই অসুখ। কিন্তু কেন এমন নাম এই অসুখের? আসলে জানাযায়, এর পেছনে রয়েছে এক বড় ইতিহাস।


বীরভূমের সিউড়ি সদর হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক প্রভাতকুমার শিবাঙগী বলেন, "জ্বর গলা খুশখুশ গলা ব্যাথা এই রোগের লক্ষণ । এক থেকে দুই সপ্তাহ থাকছে । পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে । কেউ কারো জিনিস ব্যবহার না করা । তিন চারদিন বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাবে না । ব্যাথা হলে প্যারাসিটামল দুইবার দিনে খেতে হবে । বাইরে গেলে চোখে হাত দেওয়া যাবে না ।"


রাজ্যের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এই জয়বাংলা (joy bangla) ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন জেলার হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রতিদিন জয়বাংলা অসুখ নিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন।


জানাযায়, বাংলাদেশের ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কলকাতাসহ সমগ্র রাজ্যেই ব্যাপকভাবে চোখ ওঠা রোগ (joy bangla) ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় থেকেই কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগ ‘জয় বাংলা’ (joy bangla) নামে পরিচিতি পায়।




বিভিন্ন সূত্র মারফৎ জানাযায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা শরণার্থী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও এই রোগ (joy bangla) ছড়িয়ে পড়েছিল।




তবে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরগুলি থেকেই এই রাজ্যে চোখ ওঠা বা জয় বাংলা (joy bangla) রোগটি ছড়িয়েছিল বলে মনে করা হলেও ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের মতো প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা গবেষণাপত্রসহ একাধিক গবেষণা থেকে জানাযায়, যে ১৯৭১ সালে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই চোখের এই অসুখটি ছড়িয়েছিল। এমনকি উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌতে সে বছর কনজাংটিভাইটিসকে মহামারি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল।




’একাত্তরের রাতদিন’ বইয়ের লেখক, সাংবাদিক দিলীপ চক্রবর্তী লিখেছেন- "মুক্তিযুদ্ধের সব থেকে জনপ্রিয় স্লোগানকে চোখ ওঠা রোগের নাম দেওয়ার সেটা কারণ ছিল না। সেই সময়ে ইয়াহিয়া খান বাঙালীদের রক্তচক্ষু দেখাচ্ছিলেন, আর কনজাংটিভাইটিস হলেও চোখ লাল হয়ে যায়, সেইভাবেই রক্তচক্ষুর সূত্র ধরে লোকমুখে জয় বাংলা নামটা ছড়িয়ে পড়ে। আমার লেখাতেও এই ব্যাখ্যাই দিয়েছি আমি।“




চোখ ওঠা বা জয়বাংলা (joy bangla) শুধু ১৯৭১ সালে মহামারী আকার ধারন করেই শেষ হয়ে যায়নি, ঠিক দশ বছর পর ১৯৮১ সালে আবার এই রাজ্যে প্রকোপ দেখিয়েছিলো, যদিও তার প্রভাব পূর্বের থেকে অনেকটাই কম ছিলো। এরপরেও মাঝেমাঝেই এই রোগের প্রাদূর্ভাব দেখে গিয়েছিলো, শেষ ২০১৩ সালেও এই অসুখের প্রাদূর্ভাব দেখা গিয়েছিলো। ঠিক ১০ বছর পর আবার ২০২৩ সালেও রাজ্যে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে চোখের অসুখ জয় বাংলা (joy bangla) ।