Khudiram Bose : যখন মৃত্যুদন্ডের সাজা ঘোষণা হয় তখনও ক্ষুদিরামের মুখে হাসি লেগে ছিল
"একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি,
হাসি হাসি পরব ফাসি,দেখবে ভারতবাসি
আমি হাসি হাসি পরব ফাসি, দেখবে ভারতবাসি
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
কালের বোমা তৈরি করে,
দাড়িয়ে ছিলাম রাস্তার ধারে মাগো,
বড় লাটকে মারতে গিয়ে,
মারলাম আর এক ইংলেন্ড বাসি,
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি"
-এ শুধু লোক কবির গাওয়া গান নয়, আপামর বাঙ্গালির কাছে এক কিংবদন্তীর রূপকথা। শহীদ ক্ষুদিরামকে নিয়ে জনমানসে তৈরি হওয়া আবেগের উচ্ছ্বাস ।
ক্ষুদিরাম বসুর (Khudiram Bose) জন্ম হয় ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ সালে হবিবপুর গ্রামে। মাতা লক্ষ্মী প্রিয়া দেবী হবিবপুরের সিদ্ধেশ্বরী কালি মন্দিরে ৩ দিন যাবত পুজা ও প্রার্থনা করেন যাতে ছেলে হয়, কারন তাঁর আগে তিন বার মেয়ে জন্ম গ্রহণ করে। অর্থাৎ ক্ষুদিরাম বসু চতুর্থ নম্বর নম্বর সন্তান।
তখনকার দিনে প্রচলিত ছিল যে, যখন কোন শিশুর জন্ম হয় তখন তার দীর্ঘায়ুর জন্যে কাউকে কিনে নিতে হত। তাই তিন মুঠো ভাঙ্গা চাল দিয়ে তাঁর বড় দিদি অপরূপা দেবী তাকে কিনে নেন।
ক্ষুদিরাম বসুর (Khudiram Bose) যখন ৬ বছর বয়স তখন তাঁর মা এবং পরে বাবা গত হন, তাই অপরূপা দেবী অর্থাৎ তাঁর দিদি তাকে লালন পালন করেন।
ক্ষুদিরাম (Khudiram Bose) শৈশব থেকেই দুরন্ত ও বেপরোয়া প্রকৃতির ছিলেন। এই দুরন্ত প্রকৃতির সাথে বিপ্লবী চেতনার ছোঁয়া মিশে ক্ষুদিরাম যেন এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছিলেন।
ক্ষুদিরামের (Khudiram Bose) বয়স তখন তের-চৌদ্দ বছর হবে। একদিন হেমচন্দ্র কানুনগো মেদিনীপুরের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্ষুদিরাম তাকে দেখে দৌড়ে এসে তার বাইক আটকালেন; বললেন, “আমাকে একটা রিভলবার দিতে হবে।” হেমচন্দ্র অচেনা অজানা একটা ছোকরার থেকে এই ধরনের আবদার শুনে স্বাভাবিকভাবেই বিরক্ত হলেন। জিজ্ঞেস করলেন, “তুই রিভলবার দিয়ে কী করবি?” ক্ষুদিরাম জবাব দিলেন, “সাহেব মারবো।” এরপর তিনি ইংরেজদের অত্যাচার-নির্যাতনের কাহিনী বলে কেন সাহেব মারবেন সেসব যুক্তি দিতে শুরু করলেন। হেমচন্দ্র সেদিন তাকে ধমক দিয়ে পাঠিয়ে দিলেও তার প্রেরণা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন।
১৯০৮ সাল- ক্ষুদিরাম বসু (Khudiram Bose) কোলকাতায় তখন বোমা বানানোর কাজে যুক্ত। তখন এক জর্জ ছিলেন কিংস ফর্ড, তিনি এক স্বাধীনতা সংগ্রামী সুশীল সিং সমেত অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী কে খুব কঠিন শাস্তি দিতেন। তাই কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামী তাঁকে বোমা মেরে মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই ঘটনা ইংরেজ রা জানতে পেরে কোলকাতা থেকে মুজাফর পুর ট্রান্সফার করে দেন। এই ঘটনায় স্বাধীনতা সংগ্রামীর দল সিদ্ধান্ত নেন যে মুজাফর পুর গিয়ে ওই জর্জ কে মারবেন। এই ঘটনায় দায়িত্ব পড়ে ক্ষুদিরাম বসুর ওপর। সাথী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রফুল্ল চাকী।
৩০ এপ্রিল ১৯০৮, আগের ২ই সপ্তাহ ধরে চোখে চোখে রাখার পর সেদিন অন্ধকারে জর্জের গাড়ি ভেবে বোমা মারলেন কিন্তু গাড়িতে ছিলেন দুজন নিরীহ বিদেশী মহিলা। প্রফুল্ল চাকী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পূর্বে আত্মহত্যা করেন, কিন্তু ক্ষুদিরাম বসু ওখান থেকে ২০ কিমি দূরে এক ১লা মে, ১৯০৮ সালে এক স্টেশন থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন।
কোর্টে ফাঁসির সাজা হয়। ১১ ই আগস্ট ১৯০৮ সালে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। যখন মৃত্যুদন্ড সাজা ঘোষণা হয় তখনও ক্ষুদিরাম বসুর (Khudiram Bose) মুখে হাসি লেগে ছিল-আর ফাঁসির দিনও।
বিভিন্ন তথ্য ও লেখা ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত, সংবাদ একলব্য সম্পাদনা করেনি।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊