দারিদ্র দূরীকরণ এবং মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার দৌড়ে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই মজবুত করে চলেছে ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আগের তুলানায় অনেক বেড়েছে। শিল্প-বানিজ্য ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তা বেড়েছে। এখন বহু ব্যবসায়ে পরিচালনার সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে সমস্ত কার্যনির্বাহের দায়িত্বে মহিলারা রয়েছেন। আর এই অভিযানে কিন্তু বেশি পিছিয়ে নেই গ্রামের মহিলারাও । তারা কৃষি, পশুপালন, সেলাইয়ের কাজ, জরির কাজ ইত্যাদির ব্যবসা করে নিজেদের সংসারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি ও পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন।
এক ফিলান্থ্রপিক সংস্থার গত বছর প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে মহিলা উদ্যোক্তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাগুলি আগামী কয়েক বছরে ভালো বৃদ্ধি পেতে পারে। সুতরাং, ভারতবর্ষকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি বানাতে কিংবা আত্মনির্ভর ভারত গঠনে মহিলাদের অবদান তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। তবে এটিকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে একাধিক পদক্ষেপ দরকার। এবং আসল মহিলা ক্ষমতায়নে অনেকটা পথ এগোতে হবে।
বন্ধন ব্যাংকের এমডি ও সিইও শ্রী চন্দ্রশেখর ঘোষ বলেন, "ভারতবর্ষকে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি বানাতে হলে মহিলাদের সক্ষম করতে হবে। বিশেষত আর্থিক পিরামিডের নিচের দিকে যারা আছে, যাদের কাছে চাকরির সুযোগ প্রায় শূন্য, তাদের জন্যে ছোট ব্যবসায় লগ্নি করার মতো অর্থের সময়মতো যোগান দিতে হবে।
আমি নিজের চোখে দেখেছি, দরিদ্র পরিবারে দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের জন্যে ও ভবিষ্যৎ সামান্য সুরক্ষিত করার জন্যেও সকলে বাড়ির মহিলার সিদ্ধান্তের উপর খুব নির্ভরশীল। এই সব পরিবারে প্রয়োজনের থেকে অর্থের যোগান চিরকালই কম, কিন্তু বাড়ির মহিলারা অসম্ভব দক্ষতার সাথে ওই যৎসামান্য পুঁজি নিয়েই সারা মাসের খরচ ঠিক সামলে নিচ্ছেন। এবার এই সমস্ত মহিলাদের কাছে যদি সঠিক অর্থের যোগান থাকে, তারা ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করে নিজের পরিবার ও পারিপার্শিক বদলে ফেলতে পারেন।
বিগত দুই দশকে মহিলাদের শিল্প ও বাণিজ্যিক উদ্যোগকে সাহায্য করার জন্যে অনেক কাজ হয়েছে এই দেশে। কিন্তু এখনো অনেক কিছুই করা বাকি। যেখানে দেশের দুই তৃতীয়াংশ মানুষই আজও গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন, সেখানে দেশের মোট ব্যাঙ্ক শাখার কেবল মাত্র ১১% এই সব অঞ্চলে কাজ করে। আর্থিক সংস্থাগুলিকে আরও দায়িত্ব নিয়ে এইসব এলাকার মহিলাদের জন্যে অর্থের যোগান তৈরী করতে হবে।
আর এখনকার সময়ে সবথেকে জরুরি হলো আর্থিক ও ডিজিটাল সাক্ষরতা। শুধু অর্থের যোগান থাকলেই হবে না, ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং, মোবাইল ব্যাঙ্কিং, নানা প্রকার ঋণ ও বীমা কি করে কিনতে হয়, এই সম্পর্কেও মহিলাদের মধ্যে সম্যক ধারণা তৈরী করতে হবে। আর্থিক ক্ষেত্রে যে ডিজিটাল ধারা এখন এসেছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে, তবেই হবে আসল মহিলা ক্ষমতায়ন।"
ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (ভিএফএস) এর এমডি ও সিইও, কুলদীপ মাইতি* বলেন, 'আমাদের মতো ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী সংস্থাগুলি শুধুমাত্র মহিলাদের ঋণ প্রদান করে কারণ মহিলাদের যদি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত করা হয়, তারা সমাজে উন্নয়নের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন। স্বনির্ভর মহিলারা নিজেদের পরিবারে সচ্ছলতা আনার পাশাপাশি ব্যবসায়িক পরিকাঠামোর মাধ্যমে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে রোজগারের পথ সৃষ্টি করে সমাজেরও উন্নয়ন করে থাকেন। তাছাড়া সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে, ভালো শিক্ষা দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে ক্ষমতায়িত করে তোলেন।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ লক্ষাধিক পরিবারকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করে। কিন্তু উপলব্ধ তথ্য অনুসারে, ভারতে কর্মশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ 20.3 শতাংশ। যদি আমরা দেশের শহরের দিকে তাকাই তবে তা 18.2 শতাংশে নেমে আসে। যদিও, মহিলাদের কর্মসংস্থানের হার 2021 সালের 41.25 শতাংশের তুলনায় 2022 সালে বেড়ে 51.44 শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু যদি এই হার কে আরও ভালো করতে হয়, তবে এর জন্য একটি বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন হবে।
বিগত কয়েক বছরে নারীদের বিভিন্ন দক্ষতা অর্জন এবং উন্নতি করতে সহায়তা করার জন্য বহু নীতি ও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কর্মশক্তিতে তাদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য এটি যথেষ্ট নাও হতে পারে। এটির জন্য একটি বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তির উপর ফোকাস প্রয়োজন। এমএসএমই বা মাইক্রো, ছোট এবং মাঝারি উদ্যোগগুলি এতে একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। আর্থিক সাক্ষরতাও বর্তমান সময়ে খুবই জরুরি। এটি মহিলাদের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করতে সাহায্য করার পাশাপাশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও সাহায্য করে।'
দারিদ্র দূরীকরণ এবং মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার দৌড়ে নিজেদের অবস্থান ক্রমেই মজবুত করে চলেছে ভিলেজ ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস। দেশের মোট 13 টি রাজ্যের 5 লক্ষের বেশি পরিবারের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে ক্ষুদ্র ঋণপ্রদানকারী এই সংস্থাটি। ভিএফএস ঋণ দেয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রহীতাদের সামনে রোজগারের বিভিন্ন উপায় তুলে ধরে আর বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টাকার সঠিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করে।
অন্যদিকে, ইউনাইটেড কিংডম এর এক ব্যবসায়িক আর্থিক প্ল্যাটফর্ম, টাইড ভারতে মহিলাদের তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে এবং চালাতে সহায়তা করার উদ্দেশ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি 2027 সালের মধ্যে ভারতে 500,000 মহিলা-নেতৃত্বাধীন ছোট ব্যবসাগুলিকে সাহায্য করার লক্ষ রাখছে। গুরজোধপাল সিং, সিইও, টাইড (ভারত)বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি যে মহিলা উদ্যোক্তাদের কাছে ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা মহিলা উদ্যোক্তাদের তাদের এই যাত্রায় সমর্থন করতে চাই এবং বিশ্বাস করি যে ইউকে -তে প্রতিদিন ছোট ব্যবসার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এটি করার জন্য ভাল অবস্থানে আছি।'
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊