উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত পাঁচ বাঙ্গালী পর্যটকের দেহ এলো পশ্চিম বর্ধমানে

vidai sathi



রামকৃষ্ণ চ্যাটার্জী, আসানসোল: পুজোর ছুটিতে উত্তরাখণ্ডের (uttarakhand) দেরাদুনে (dehradun) বেড়াতে গিয়ে দুর্ঘটনা কবলে পড়লেন একদল বাঙালি পর্যটক (tourists)। আর সেই দলে ছিল আসানসোল, দুর্গাপুর ও রানিগঞ্জ থেকে ৩০ জনের পর্যটকের দল। আর ওই দলের মধ্যে ১২ জন পর্যটক নিয়ে থাকা একটি গাড়ি কৌশনি যাওয়ার পথে হঠাৎই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাপকোট থানার শ্যামা গ্রামের কাছে রাস্তার পাশের খাদে পড়ে যায়। আর ওই ঘটনায়র জেরে ঐ গাড়িতে থাকা ৫ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় বাঘেশ্বর হাসপাতালে ভর্তি হয় আরো ৭ জন।

প্রসঙ্গত লক্ষী পুজোর পরের দিন গত ২১ অক্টোবর আসানসোল থেকে দেরাদুনে বেড়াতে গিয়েছিলেন ৩০ জনের ওই দলটি। কিন্তু মুন্সিয়ান থেকে সড়কপথে কৌশানির দিকে যাচ্ছিল ওই দলটি। সেই সময় মোট তিনটি গাড়িতে ভাগ হয়ে ছিলেন পর্যটকরা।

আহত এক পর্যটকের কথায় ‘শ্যামা গ্রামে ব্রিজ পেরোনোর পর পেছন থেকে একটি গাড়ি আমাদের গাড়িকে ধাক্কা মারে। কোনওমতে সেই ধাক্কা সামলে নেন আমাদের গাড়ির চালক। গাড়ি থেকে নেমে দেখি, পেছনে গাড়িটা রাস্তার পাশে খাদে পড়ে গেছে। ঐ গাড়িতে ১২ জন ছিলেন।

এদিকে এঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ওই এলাকার স্থানীয় পুলিস ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। দুর্ঘটনাগ্রস্থ গাড়ি থেকে সকলকে উদ্ধার করেন তারা। আর এই ঘটনার জেরে ৫ জন বাঙালী পর্যটকের মৃত হয়। এরা সকলেই পশ্চিম বর্ধমানের (west burdwan) বিভিন্ন জায়গায় বাসিন্দা বলে জানা যায়। আর উত্তরাখণ্ডে মৃত পর্যটকেরা হলেন কিশোর ঘটক (৫৯) বাড়ি রানীগঞ্জ, শ্রাবণী চক্রবর্তী (৫৫) বাড়ি আসানসোল, সুব্রত ভট্টাচার্য (৬১) বাড়ি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টে, চন্দনা খাঁ (৬৪) বাড়ি রানীগঞ্জে, ও রুনা ভট্টাচার্য (৫৬) তারও বাড়ি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্টে বলে জানা যায়।

এদিকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শনিবার মৃত ওই পাঁচ পর্যটকের দেহ উত্তরাখণ্ড থেকে বিশেষ বিমানে নিয়ে আসা হয় কলকাতা বিমান বন্দরে। আর সেখানেই মৃতদেহ গুলি তুলে দেওয়া হয় মৃতের পরিবারের হাতে। আর সেখান থেকেই শববাহি শকোটে বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে দেহ গুলিকে নিয়ে আসা হয় আসানসোল, দুর্গাপুর ও রানীগঞ্জে তাদের বাসভবনে।

এদিকে দেহ গুলি আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে গোটা এলাকা। একে একে পরিবারের প্রিয় সদস্যকে শেষ বারের জন্য শ্রদ্ধা জানায় তারা। পরে মৃতদেহ গুলিকে শববাহী সকোটে কফিন বন্দী অবস্থায় অন্তসটিক্রিয়ার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুরের বিরভানপুর বার্নিং ঘাট, আসানসোলের দোমহানি বার্নিং ঘাটে ও রানীগঞ্জের দামোদর মহা শ্মশানে।

এদিন আসানসোলের মহিশালীর শিমুলতলায় মৃতা শ্রাবণী চক্রবর্তীর বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পূর্ত ও আইন মন্ত্রী মলয় ঘটক, আসানসোল পৌর নিগমের প্রশাসক অমরনাথ চ্যাটার্জী। আর এপ্রসঙ্গে এদিন রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের জেলা থেকে বিভিন্ন মানুষ গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডে বেড়াতে। সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় আমাদের পাঁচ পর্যটকের। আর এঘটনা শোনার পর থেকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বিগ্ন ছিলেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ দুটি বিশেষ বিমানে দেহ গুলিকে নিয়ে আসা হয়। সেখানে আমি এবং মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। আর এর পরেই দেহ গুলিকে তুলে দেওয়া হয় মৃতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে।