Durga Puja বিদেশে বাঙালি মহিলাদের পুজো
শবরী চক্রবর্তীঃ
মাঝে মাঝেই মেঘ-বৃষ্টির ডানা ঝাপটানো, তবু আকাশ জানান দিচ্ছে শরৎ হাজির। তার মানেই দুর্গাপুজোও আসছে। যে যেখানেই থাক, বাঙালি এই পাঁচদিনের প্রস্তুতি একটু একটু করে সারা বছরই করে। এমনকী বিদেশের বাঙালিরা শেষ মুহূর্তেও প্লেনের টিকিট কাটে দেশের পুজোর স্বাদ নিতে, একবার সেই চেনা মাটিটার গন্ধ মেখে নিতে। কিন্তু কেমন হয় সাগরপারের পুজো সেখানেও কী এমনই ঢাক বাজে? প্রসাদ খাওয়া হয় ?সিঁদুর খেলার জন্য মুখিয়ে থাকেন ওঁরা?
সব এক রকমই হয়। তার প্রমাণ সান ফ্রানসিসকো বে এরিয়ার সানটা ক্লারা-র উইমেননাউ-এর দুর্গাপুজো। এ পুজো একেবারেই মহিলা পরিচালিত। আর প্রতি বছর ওঁরা প্রমাণ করছেন, একজোট হয়ে কাজ করলে নারীশক্তির কাছে পুরুষ কোত্থাও নেই।
এনা সরকার ২০১৫-তে এই পুজো শুরু করেন। তিনি উইমেননাউ টিভি-র সিইও। বে এরিয়ায় এই টিভির সাউথ এশিয়ান টক শো খুবই জনপ্রিয়। তিনিই প্রথম এই পাহাড়প্রমাণ উদ্যোগটি নেন এবং তারপর থেকে প্রত্যেক বছর ঐতিহ্যের সঙ্গে নিষ্ঠা, ঔজ্জ্বল্য, আধুনিকতার মিলমিশে সানটা ক্লারার পুজোকে করে তুলছেন অতুলনীয় এবং ভারতীয়দের সবথেকে প্রিয় ইভেন্ট যার জন্য সারা বছর তাঁরা অপেক্ষা করেন। অবশ্যই তিনি একা নন, তাঁর উইমেননাউ টিভি-র সঙ্গিনীরা মুর্তি আনানো, ভোগের ব্যবস্থা করা, পরিবেশন করা, পুজোর প্রস্তুতি নেওয়া, ফল কাটা, ফাংশনের দায়িত্ব নেওয়া, দর্শনার্থীদের সামলানো এবং ধুনুচি নাচের আয়োজন করা ও নাচা—সব করেন।
আজকের মেয়েদের শক্তি সেলিব্রেট করতেই এই পরিকল্পনা। তারজন্য শক্তিরূপিনী মা দুর্গার পাপকে ধ্বংস করার এই মহাযজ্ঞ ছাড়া আর কাকেই বা সামনে রাখা যায়! আর প্রয়োজন ছিল এমন এক কালচারাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার যেখানে প্রবাসী ভারতীয়রা একজোট হতে পারবে।
‘সানটা ক্লারা-র পুজো একই সঙ্গে উৎসবের ঐশ্বরিক দিকের সঙ্গে উইমেননাউ-এর দর্শনকে মেলাচ্ছে। উইমেন নাউ মানে আজকের নারী। নারীশক্তির প্রতীক এই মা দুর্গা। তাঁর পুজো ছাড়া নারীশক্তিকে বোঝা সম্ভব নয়। আর একই ছাতের নীচে সবাই জড়ো হচ্ছে, আলাপআলোচনা হচ্ছে, এমন একটা মঞ্চেরও দরকার ছিল।’ এনা বললেন।
শহর হোক বা গ্রাম, অভিজাত বাড়ি পুজোর প্রস্তুতিতে সবথেকে বড়ো দায়িত্ব মেয়েরাই নেয়, পুরুষ বাইরের কাজেই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু সানটা ক্লারা অন্য ধরনের ছবি দেখায়। মূর্তি আনা থেকে বিসর্জন—সব তাঁরা করেন। এখানেও সেই দেশি-বিদেশী, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য, ইন্ডিয়ান-আমেরিকান তর্ক, ঝগড়া চলে, এনা তা স্বীকারও করেন। ‘যে উৎসাহ, ঐতিহ্য, আনন্দ, বাংলা ও বাঙালির পুজোয় দেখা যায়, এখানে তা অসম্ভব। হ্যাঁ, আমরা চেষ্টা করি ট্র্যাডিশনাল শাড়ি পড়ে, খাওয়াদাওয়া করে, শতাব্দী-প্রচীন প্রথা-প্রকরণের হাত ধরে মাটির কাচাকাছি থাকতে। দেশের থেকে অনেক দূরে থেকেও আমাদের উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে না।’ বললেন এনা।
কিন্তু এখানেই যারা জন্মেছে, বড়ো হয়েছে তারা পারে এই উৎসব, এই সেলিব্রেশনের সঙ্গে মিশে যেতে?
‘অবশ্যই ওদের অসুবিধে হয়। ওরা মিশ্র সংস্কৃতিতে বড়ো হয়েছে। এক ঈশ্বরের কাছে সমর্পণের মানে ওরা জানে না। কিন্তু ওরা পুজোয় শামিল হয়, বাবা-মার সঙ্গে ঠাকুর দেখে। ভোগ খায়। ঢাকের সঙ্গে নাচে না হয়তো কিন্তু উৎসবের সুরটা উপভোগ করে।’ এনা বললেন।
তাঁর এই উইমেননাউ-এর পুজো এত বড়ো হয়েছে কারণ ‘আমার উইমেননাউ টিভি-র টিম এ ব্যাপারে সব সময় আমার সঙ্গে আছে এবং শুধু ভারতীয় নয়, বে এরিয়ার আমার আমেরিকান বন্ধুরাও আমাদের দুর্গাপুজোয় মাতে।’ এভাবেই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এনা সরকার।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊