দুর্গা মায়ের মূর্তি তৈরিতে লাগে বেশ্যাদ্বারের মাটি, কিন্তু কেন?


দুর্গা মায়ের মূর্তি তৈরিতে লাগে বেশ্যাদ্বারের মাটি, কিন্তু কেন?



প্রকৃতি সেজে উঠেছে, নারী শক্তির আবাহনের সুর ভেসে আসছে আকাশে-বাতাসে। দুর্গা মায়ের মূর্তি বানানোও শুরু হয়ে গেছে, এরপর হবে প্রাণ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু আপনি জানেন কি, দুর্গা মায়ের প্রতিমা তৈরিতে অতি প্রয়োজনীয় উপাদান কি?


জানা যায়, দুর্গা প্রতিমা গড়তে প্রয়োজন গম্ভীর মূত্র, গোবর, ধানের শীষ ও বেশ্যাদ্বারের মাটি - এই চারটি মূল উপাদান। কিন্তু পতিতালয়ের মাটি কেন?


সমাজতাত্বিকেরা বলে থাকেন- 'যে পুরুষ পতিতালয়ে যায়, সে তার কয়েক জন্মের পুণ্যের অর্জিত ফল রেখে আসে পতিতালয়ে, বিনিময়ে সে বহন করে আনে পাপ। সুতরাং পতিতাবৃত্তি যারা গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, তারা অর্জন করলো পুরুষের অর্জিত পুণ্য।' আর তাই এই পুণ্যস্থানের মাটি আবশ্যক।


পতিতা বা যৌন কর্মীদের দশ মহাবিদ্যার অধিকারীনি ধরা হয়। মহানির্বাণতন্ত্রে বলা হয়েছে- " " অভিষিক্তা ভবেৎ বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে " আর কুলার্ণবতন্ত্র পতিতা বা বেশ্যা দের সম্মন্ধে বলা হয়েছে- " পূর্ণাভিষেকো দেবেশি দশ বিদ্যাবিধোস্মৃত' । পূর্ণাভিষেক মন্ত্রচৈতন্য হওয়ার ফলে যিনি দেবত্বে উন্নীত হয়েছেন, এরকম অভিষিক্তা আর কখনও বেশ্যা থাকে না। তিনি দশবিদ্যার অধিকারী। যেখানে তারা থাকেন, সেই প্রবেশ দ্বারের মাটিকে পুণ্যমাটি বলা হয়।


প্রসঙ্গত আরও একটা বিষয় এই ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ, মহামায়ার যে নবরূপ বর্ণনা করা হয়েছে, সেই নবরূপগুলোর নবতম রূপই হলো পতিতা। এই নবরূপ গুলি হলো- নর্ত্তকী, কাপালিক, ধোপানী, নাপিতানী,ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী, এবং পতিতা।


একটা বিষয় এখানে লক্ষ্যনীয়, নারী শক্তির পূজা যখন হবে তখন সমাজের কোন অংশেরই নারী শক্তি বাদ যায়নি। আর সমাজ যাকে সমাজের গন্ডীর বাইরে স্থান দিয়েছে , সেই 'বারবণিতা'দের আবশ্যিক করে তোলা হয়েছে মূর্তি গড়ার ক্ষেত্রে- তা সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থেই হোক কিংবা পতিতাদের পূণ্যের স্বীকৃতিই হোক।


তবে এই সকল যুক্তি অনেকেই স্বীকার করেননা। মহানির্বানতন্ত্রে যে বেশ্যাদ্বারের মাটির কথা উল্লেখ রয়েছে সেই বেশ্যাদ্বারের মাটি মান পতিতালয়ের মাটি নয় বলেই তাঁদের যুক্তি। তারা বলেন- তন্ত্রে পূর্ণ অভিষিক্ত যোগিনী(সাধিকারা) বেশ্যা উপাধি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। উক্ত বেশ্যা মানে কূলটা বা গণিকা অথবা পতিতা নয়। এমনকি পতিতার সাথে যে ব্যাক্তি সম্পর্ক করবে সে ব্যাক্তি রৌরব নামক নরকে গমন করবেন। তন্ত্রে এরুপ সদাশিব দেবী পার্বতীকে বলেছেন।"


তাহলে বেশ্যাদ্বারের মৃত্তিকা কি? এক্ষেত্রে উত্তর- "দশ মহাবিদ্যার উপাসক স্বামী স্ত্রী যে গৃহে দশ-মহাবিদ্যার উপসনা ও নিজেরা বসবাস করিয়া থাকেন সেই গৃহ-দ্বারের মাটিকে বেশ্যাদ্বারের মৃত্তিকা বলে।

বর্তমানে সে রকম দশমহাবিদ্যার উপাসক দম্পত্তি নেই- বলা চলে দুস্প্রাপ্য। তাই শাস্ত্রবিদগন নিজের গুরুর গৃহদ্বারের মাটি ব্যাবহার করতে বলেন। অথবা কোন সতীপীঠের মাটি ব্যবহার করতে বলেন।"

অর্থাৎ পতিতা আর বেশ্যা এই দুটি শব্দকে সমার্থক হিসাবে  ধরে নেওয়ায় বেশিরভাগ পণ্ডিত বেশ্যাদ্বারের মাটি বলতে পতিতালয়ের মাটিকেই বুঝে থাকেন। 

তর্ক-বিতর্ক যাই হোক, পতিতা নারীদের সামাজিক ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে এইভাবেই শক্তি পূজা বা নারী শক্তির পূজা যে স্বার্থকতা পায় তা স্বীকার করতেই হবে। 


তথ্যঋণঃ
১। 
সুস্মিত ভদ্র
প্রাক্তন Former Sr Divisional Accounts Officer (DAO) (1981-2016)
২। 
বিজয়
 পড়তে জানতে ভালো লাগে