Latest News

6/recent/ticker-posts

Ad Code

Give Cow Dung, Get a Gas Cylinder: গোবরের বদলে গ্যাস সিলিন্ডার ! তাও আমাদের দেশেই- গ্যাসের অগ্নিমূল্যের বাজারে জেনেনিন উপায়

গোবরের বদলে গ্যাস সিলিন্ডার ! তাও আমাদের দেশেই- গ্যাসের অগ্নিমূল্যের বাজারে জেনেনিন উপায়  

Give Cow Dung, Get a Gas Cylinder



 শবরী চক্রবর্তীঃ 

অবাক হচ্ছেন? হবেন না। এরকমটা সত্যিই ঘটছে। বিহারের মধুবনি জেলার সুখেট গ্রামের বাসিন্দারা গত ছ মাস ধরে বিনা পয়সায় দু মাস অন্তর এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার পাচ্ছে, বদলে তাদের দিতে হচ্ছে বাড়ির আবর্জনা আর গোবর। এর ফলে দুষণমুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, ঘর-দোর আবর্জনা মুক্ত থাকছে এবং এই আবর্জনা ও গোবর কম্পোসটিং করে উন্নত মানের সার তৈরি হচ্ছে যা স্থানীয় চাষিদের চাষের কাজে লাগছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং এই মহাযজ্ঞের প্রশংসা করে এর উল্লেখ করেছেন তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে।

এই উদ্যেোগের প্রধান মুখ সমস্তিপুর জেলার পুসায় ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলার ড. রমেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তবের। তিনিই প্রাণীর শরীরজাত বর্জ্য পদার্থকে ভার্মিকম্পোস্টিঙের মাধ্যমে সারে পরিণত করে চাষের উন্নতিতে লাগানোর জন্য এই প্রজেক্ট তৈরি করেছেন।

Give Cow Dung, Get a Gas Cylinder



ভার্মিকম্পোস্ট হল, গোবর, আগাচা, নিম পাতা, এবং কেঁচোর মল দিয়ে তৈরি সার বা জৈবিক খাদ বা অর্গানিক ফার্টিলাইজার।

পি এম উজ্জ্বলা যোজনার মাধ্যমে এই এলপিজি গ্যাস পেয়েছিলেন সুখেটের মহিলারা, ফলে মাটির উনুনের ধোঁয়া থেকে মুক্তিও পেয়েছিলেন তাঁরা। আগে উনুনের ধোঁয়ায় বসে থেকে তারা অসুখে পড়তেন, সেটা এই যোজনা বন্ধ করেছিল। কিন্তু সিলিন্ডার রিফিল করা সম্ভব হচ্ছিল না টাকার অভাবে। এখান থেকে বেরোবার উপায় হিয়েবেই শ্রীবাস্তব সাহেবের এই পরিকল্পনা। এরপর শুরু হয় বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাড়ির আবর্জনা, গোবর ইত্যাদি সংগ্রহ করা, এগুলো থেকে কমপোস্ট করা, সেখান রোজগারের উপায় বার করা, ঘুঁটের বিক্রি বাড়ানো যাতে এই প্রক্রিয়ার ফলে দু মাস অন্তর এলপিজি-র রিফিল পাওয়া যায় এবং গ্রামে চাকরির সম্ভাবনা বাড়ে।

প্রাথমিকভাবে শ্রীবাস্তব সাহেব ভার্মিকম্পোস্টিঙের জায়গা তৈরি করেন মাচিডিহ্-র সুনীল যাদবের দেওয়া জমিতে। সঙ্গে দেন কেঁচো ও আবর্জনা ইত্যাদি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করার গাড়ি। দুজন স্থানীয় যুবক এই সংগ্রহ করার কাজ করত। ‘আমরা গ্রামবাসীদের বোঝাই কীভাবে তারা তরকারির খোলা, বেঁচে যাওয়া খাবার বা ঘুঁটের মাধ্যমে ভার্মিকম্পোস্টিঙে অংশ নিতে পারে। দু মাসের মধ্যে যেসব পরিবার ১২০০ কেজি আবর্জনা দিতে পারে, তারা ভর্তি গ্যাস সিলিন্ডার পায়।’ বললেন সুনীল যাদব। তাঁর জমিতেই ভার্মিকম্পোস্টিঙের ইয়ার্ড তৈরি হয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিনি ২৫০০০ কেজি ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করতে পেরেছেন।

মহিলারা এখন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে গোবর বা আবর্জনা বাঁচাচ্ছেন ভার্মিকম্পোস্টিঙের জন্য কারণ এতে তাঁদের রোজগার হচ্ছে, আর্থিক উন্নতিও হচ্ছে।

মাছচাষিরাও ভার্মিকম্পোস্ট ব্যবহার করছেন। ‘এতে জল ঘন হয় এবং মাছেদের খুব উপকার হয়।’ বললেন রাহুল মাহাতো, তিনি মাছের চাষ করেন। এই উদ্যোগের ফলে কাঠ জ্বালিয়ে রান্না বন্ধ হয়েছে, পরিবেশ আবর্জনা মুক্ত হয়েছে. তাই খুব খুশি মাচিডিহ্-র গ্রামপ্রধান রেণু দেবী। তিনি বললেন, ‘এখনও পর্যন্ত ৫০টি পরিবার এই উদ্যোগে সামিল হয়েছে, এরপর মাচিডিহ্ ও গোধনপুর জেলাকেও এই প্রজেক্টের আওতায় আনা হবে।’

সুখেটের এই মডেল চাষিদের আকর্ষণ করেছে। ৪০০ চাষি এই প্রজেক্ট দেখে বুঝেছে, চাষের পর পড়ে থাকা জিনিষ বা জলজ গাছ যা জল থেকে তুলে ফেলা হয়, তা দিয়ে ভার্মিকম্পোস্ট করা যায়।

‘এই মডেল সফল হলে সারা রাজ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে। তাহলে ৫০ লক্ষ টন ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি হবে যা কেমিকেল সারের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা নেবে।’ বললেন ড. শ্রীবাস্তব

বিহার সরকার গঙ্গার তীরবর্তী এলাকায় একর পিছু অর্গানিক ফার্মিঙের জন্য ১১,৫০০ টাকা ভর্তুকি দেয়। ‘সেক্ষেত্রে সুখেট মডেলের মতো অন্য গ্রামে এমন আরও মডেল থাকলে সরকার ভার্মিকম্পোস্ট এখান থেকেই কিনবে। এর থেকেই বোঝা যায়, এই মডেলের ভবিষ্যত কতখানি উজ্জ্বল।’ বললেন ড. শ্রীবাস্তব।

উনুনের কালো ধোঁয়া থেকে বেরোনোর জন্য এখনও সময় লাগবে, কিন্তু বেরিয়ে আসার রাস্তা যে দেখা গিয়েছে, তা বিহারের মহিলারা বুঝেছেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Ad Code