সঞ্জিত কুড়ি, পূর্ব বর্ধমানঃ
চলে গেলেন বর্ধমান শহরের যাত্রাপ্রেমী, কবি সাহিত্যিক ও সুসংগঠক বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভূগছিলেন। সোমবার রাতে বর্ধমান শহরের খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
মাত্র ১৮ বছর বয়স থেকেই তিনি যাত্রার প্রতি টান অনুভব করেন। অভিনয় না করলেও সুরপাটি এবং পোশাক পরিকল্পনা ও তা সরবরাহ করায় তিনি যথেষ্ট অবদান রাখেন। স্বনামধন্য অভিনেতা উৎপল দত্ত, নরশেখর, ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়, শম্ভু বাগ, মহেন্দ্র গুপ্ত, নীতীশ মুখোপাধ্যায়, মলিনা দেবী, প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় অনাদি চক্রবর্তী, পঞ্চু সেন প্রমুখ বিখ্যাত যাত্রাশিল্পীর সান্নিধ্যে এসেছিলেন। মফঃস্বলে পোশাক সরবরাহ ও সুরপাটির ব্যবসা থাকায় একসময় ব্যারাকপুরে উৎপল দত্ত অভিনীত যাত্রাপালায় পোশাক সরবরাহ করার বরাত পেয়েছিলেন বীরেন্দ্রবাবু।
বীরেন্দ্রবাবুর ছোট ছেলে দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁর বাবা ছিলেন যাত্রাপাগল। কিন্তু মফঃস্বলের লোক হওয়ায় সেদিন উৎপলবাবু নাক সিঁটকেছিলেন। প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু, যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হওয়ার পর সেই উত্পল দত্তই তাঁর বাবার প্রশংসা করে বলেন, আপনার রুচিবোধ রয়েছে। বিখ্যাত এক অভিনেতার কাছ থেকে এই প্রশংসা বীরেন্দ্রবাবুকে আপ্লুত করেছিল।
বর্ধমানের এক অভিজাত বস্ত্র ব্যবসায়ীর সহযোগিতায় মহারাজ অভয় কুমার চাঁদের বাড়িতে রাজা লক্ষ্মন নাটক আয়োজিত হয়। সেখানেও তাঁর পোশাক সরবরাহ হয়। সেখানে ছোট রাজকুমার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুকুমার সেন, ম্যাজিস্ট্রেট, এসপি প্রমুখ স্বনামধন্য মানুষের পাশে তাঁকে বসতে দেওয়া হয়। এই সম্মানেও যথেষ্ট আপ্লুত হন তিনি।
দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন, জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁর বাবা আফশোস করতেন, যাত্রার মাধ্যমে লোকশিক্ষার মতো যে কথা স্বয়ং ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন সেই শিল্পই এখন কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকার এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুক জীবনের শেষ ইচ্ছা ছিল এটাই।
তাঁর মৃত্যুতে বর্ধমানের বহু নাট্যপ্রেমী ও যাত্রাপ্রেমী মানুষ শোক প্রকাশ করেন। মঙ্গলবার সকালে বর্ধমানের নির্মল ঝিল শ্মশানে তাঁর অন্ত্যোষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সেখানেও প্রবীণ এই যাত্রাপ্রেমিককে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন অসংখ্য গুণমুগ্ধ।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊