source-w vista

খুব কম সময়ের মধ্যে পাল্টে যাচ্ছে জীবনের রূপরেখা। মূহুর্তেই বর্তমান জায়গা করে নিচ্ছে স্মৃতির মণিকোঠায়। এই নিয়ে শিক্ষক মিহির সরকারের বিশেষ প্রতিবেদন- 

আস্তে আস্তে সব হারিয়ে গেল- শুধু রইল স্মৃতি


ক্লাস সেভেন 1999 বা 2000 সাল , গ্রামের স্কুল থেকে শহরের স্কুলে ভর্তি হলাম। চিরাচরিত সরকারি বাসে যাতায়াত। বলরামপুর রোড জামতলায় বাস স্টপ ছিল। আর নেমেই ছিল রাস্তার ডানদিকের তিনটি খেলনার দোকান। মোবাইলের নাম পর্যন্ত তখনো শুনি নি। কালার টিভি ও স্বপ্ন । তখন ওই দোকানের ব্যাটারি চালিত খেলনা গুলিই অসীম বিস্ময়ের সৃষ্টি করত। একটি উলটানো শঙ্কুর মাথায় ঈগল পাখির ব্যালেন্স ও ছিল বিস্ময়। আমার খুব শখ ছিল বিভিন্ন ফলের আকারের রাবার ও স্টিকার সংগ্রহ। আম, ভুট্টা, কলা ইত্যাদি ফলের রাবার আমার কাছে ছিল। চন্দন কাকু (সৌরভ গিফট হাউস) মাঝে মাঝে আমাকে ডেকে বিভিন্ন খেলনা দেখাতো। বল খেলা বাঘ, দানা ঝাপটানো পাখি, চুটকি দিয়ে কথা বলা টিয়া আরো অনেক কিছু। খুব কিনতে ইচ্ছা হতো কিন্তু সত্যি কোনোদিন বাড়িতে জোর করিনি। তবে ব্যাটারির বিভিন্ন আওয়াজ করা বন্দুক একবার মায়ের হাতে পায়ে ধরে কিনে নিয়েছিলাম।
এরপর ক্লাস নাইনে ওঠার পর মা 100 টাকা দিয়ে একটা ছোট পোর্টেবল টেপরেকর্ডার কিনে দিয়েছিল যার পোশাকি নাম ছিল walkman । ছোট টেপরেকর্ডার যেটা ফিতের ক্যাসেট দিয়ে চলত। আমাদের সময়ের প্রায় সব বন্ধুদেরই একটা করে ছিলো এই গ্যাজেট। হেডফোন দিয়ে গান শুনতাম। ক্যাসেট কেনার সাধ্য তো ছিল না তাই বন্ধুরা একে অপরের ক্যাসেট শেয়ার করতাম। এখনকার বাচ্চারা এসব বুঝবেই না।





এরপর এলো গেম । গেম যে কিজিনিস তা বুঝতাম ই না। হটাৎ একদিন দাদামনি শিলিগুড়ি থেকে একটা ক্যাকুলেটারের ও রিমোটের মতো দেখতে একটা গেম গিফট করে আমাকে। প্রথম দশদিন তো এটা বুঝতে লেগে ছিল যে এটা খেলে কিভাবে। যাইহোক এই গেম আমাদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিল।
এরপর এই গেমের update আসলো ভিডিও গেম। মাধ্যমিক দেবার পর বাবা একটা ভিডিও গেম আমাকে কিনে দিয়েছিল।সেটা 2004 । সুপার মারিও, ট্যাংক, অলিম্পিক , কন্ট্রা, সোনিক আজকের পাবজির থেকেও অনেক মজাদার ছিল।




আরেকটা জিনিস মিস করে যাচ্ছিলাম, সেটা হলো আমাদের মোবাইল এর আগের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাজেট সেটি হলো FM রেডিও। ছোট্ট মোবাইলের মতো দেখতে এন্টেনা যুক্ত রেডিও। খুব পপুলার হয়েছিল 2004/05 এর সময়। মোটামুটি আমাদের বয়সী 99% ছেলেদের কাছে এটি ছিল গান শোনার সর্বাধুনিক পন্থা।
102.3 এফ এম রেইনবো , দিনহাটায় শুধু এই চ্যানেল টি শোনা যেত। সন্ধ্যায় হলের মাঠে সবাই মিলে কানে ডেডফোন গুঁজে এই FM শুনতাম।



আর মোবাইল সদৃশ একটি যন্ত্র ছিল ডিজিটাল ডাইরি। কিছু বিত্তশালী ছেলেদের কাছে এটি দেখা যেত। ছোট্ট ক্যালকুলেটর এর মত দেখতে । নাম ঠিকানা লিখে রাখা যেত, এছাড়া এলার্ম ও দিত।

এরপর আসলো মোবাইল। এর আস্তে আস্তে সব হারিয়ে গেল। শুধু রইল স্মৃতি।