সৌমক পোদ্দার,বারুইপুরঃ এক দেশ-এক নিশান-এক প্রধান, কাশ্মীরে ৩৭০ বাতিল করে শ্যামাপ্রসাদকে সম্মান দিলেন মোদী। এক দেশ-এক নিশান-এক প্রধান; কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার বিরুদ্ধে; দাবি তুলেছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ ও ৩৫এ বাতিল করে সেই শ্যামাপ্রসাদকেই; বিশেষ সম্মান দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জম্মু ও কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ এর বিরোধীতা করে; শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী প্রথম বলেছিলেন; যে এক দেশে দুই আইন, দুই প্রধান ও দুই নিশান চলবে না। ১১ই মে ১৯৫৩ সালে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী; শ্রীনগর প্রবেশ করলে গ্রেফতার হন। পরে এক রহস্যজনক পরিস্থিতিতে শ্রীনগরেই; তাঁর মৃত্যু হয় ২৩শে জুন ১৯৫৩ সালে।


কাশ্মীর নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত মোদী সরকারের; কাশ্মীর থেকে তুলে দেওয়া হল ৩৫এ ও ৩৭০ ধারা। কাশ্মীরে গত শুক্রবার থেকেই; অভূতপূর্ব এক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। হিন্দুদের পবিত্র অমরনাথ তীর্থযাত্রা; কাটছাঁট করে সবাইকে কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে চলে যাওয়ার; পরামর্শ দেওয়া হয়। এবার কাশ্মীর থেকে তুলে দেওয়া হল ৩৫এ ও ৩৭০ ধারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন সংসদেও।


সম্মান পেলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম শিল্পমন্ত্রী; ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা; বাঙ্গালী হিন্দুদের জন্য পূর্ব পাকিস্তানকে ভেঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টিকারী, কাশ্মীরকে ভারতের অভিন্ন অঙ্গরাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য; আজীবন আন্দোলনকারী ভারত কেশরী ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি। অভিযোগ আছে; নেহেরু ও শেখ আবদুল্লার চক্রান্তে; কাশ্মীরেই রহস্যময়ভাবে খুন করা হয়েছিলেন তাঁকে।


আর্টিকেল ৩৫এ অনুযায়ী ভারতের কোন নাগরিক জম্মু কাশ্মীরে সম্পত্তি কিনতে পারবে না; বাড়ি তৈরি করতে পারবে না; কিন্তু কাশ্মীরের নাগরিকরা ভারতের যে কোন রাজ্যে জায়গা কিনতে পারবে। আর্টিকেল ৩৫এ অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীরে জন্ম হলে; তবেই কাশ্মীরের স্থায়ী নাগরিকত্ব পাওয়া যাবে। তবে তার জন্য নিয়ম আছে। ১৯৫৪ সালে ১৪ই মে এর ১০ বছর আগে থেকে; সেই রাজ্যে বাস করছে এমন লোকই কাশ্মীরের স্থায়ী নাগরিক।


কাশ্মীরের আজ যে এই অবস্থা; তার জন্য প্রধান কারন আর্টিকেল ৩৭০ এবং আর্টিকেল ৩৫এ। কাশ্মীরকে এই বিশেষ রাজ্যের তকমা দিয়েছে; ভারতের সংবিধান। ১৪ই মে ১৯৫৪ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ আর্টিকেল ৩৫এ কে যুক্ত করেন সংবিধানে। এবার রাষ্ট্রপতি রমানন্দ কোবিন্দের হাত ধরে; তা উঠে গেল ভারতীয় সংবিধান থেকে।


সংবিধানে কোন অনুচ্ছেদ যুক্ত করতে হলে; সংসদদের দ্বারা সংশোধনের মাধ্যমে যুক্ত করতে হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর সরকার; এই প্রস্তাব সংসদের সামনে রাখেই নি। সোজা রাষ্ট্রপতি ভবনে পাঠিয়ে দেয়। রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার এর মাধ্যমে; একে সংবিধানে যুক্ত করেন। জহরলাল নেহেরুর একটা ভুল; দেশকে ৭০ বছর ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফেলে রেখেছে।


আর্টিকেল ৩৭০ অনুযায়ী জম্মু কাশ্মীরে; ভারতীয় দণ্ডবিধি বা IPC( Indian Pinal Code) কাজ করে না; এখানে RPC( Ranbir Pinal Code) অনুযায়ী সমস্ত কাজ হয়। ভারতের সমস্ত রাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছর; কিন্তু কাশ্মীরের বিধানসভার মেয়াদ ছয় বছর। আর্টিকেল ৩৭০ অনুযায়ী; কাশ্মীরের লোকেদের দ্বিনাগরিকত্ব রয়েছে। একটি ভারতের এবং আরেকটি কাশ্মীরের। আর্টিকেল ৩৭০ অনুযায়ী এখানে হিন্দু ও শিখরা সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও; কোন সংরক্ষণ এর সুবিধা পায় না।


জহরলাল নেহেরু ও শেখ আবদুল্লার এই আর্টিকেল ৩৭০ ও আর্টিকেল ৩৫এ; প্রবর্তন এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং জোর করে কাশ্মীরে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁর দাবী ছিল; “এক নিশান, এক বিধান, এক প্রধান”। তখন নিয়ম ছিল; ভারত সরকারের পারমিট ছাড়া; কাশ্মীরে প্রবেশ করা যাবে না। ২৩ জুন ১৯৫৩ তে শ্রীনগরে; রহস্যময়ভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর মৃত্যু হয়।


শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সেই দাবী মানতে ও জহরলাল নেহেরুর সেই ভুলের খেসারত মেটাতে; উদ্যোগী হল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভারতবাসীর আশা পূরণ করল মোদী সরকার; মত রাজনৈতিক মহলের। তবে বিরোধীদের চরম সমালোচনার মধ্যে পরেছে মোদী সরকার। তবে সিদ্ধান্ত যে ঐতিহাসিক; তা বলছেন সবাই। আর এই সিদ্ধান্তের ফলে সম্মান পেল শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এর কাশ্মীর নিয়ে; এক দেশ-এক নিশান-এক প্রধান লড়াই।