ঢাকা বিমান দুর্ঘটনা: ১৯ জনের মৃত্যু, শতাধিক আহত
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে। এই দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহেদ কামাল আজ সোমবার বেলা পৌনে ৫টার দিকে মাইলস্টোন স্কুলের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা পরিদর্শনের আগে এই তথ্য জানান।
আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং দুপুর সোয়া ১টার দিকে বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনার বিস্তারিত:
বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দর আলী ভবনের প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে। এতে ভবনের ভেতরে থাকা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বের হতে পারেনি। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিমানটি প্রধান ফটকে আছড়ে পড়ে ভবনটির নিচতলার এক পাশ দিয়ে প্রবেশ করে আরেক পাশে বের হয়ে যায়।
দোতলা হায়দার আলী ভবনটি পশ্চিমমুখী এবং এর মাঝখানে প্রধান ফটক ও দোতলায় ওঠার সিঁড়ি রয়েছে। বিমানটি সোজা ফটকে আছড়ে পড়ে ভবনটিকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ও সেনাসদস্যরা বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বিমানটির বিভিন্ন অংশ কেটে বের করছেন।
ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ভবনটির প্রধান ফটকে সব সময় স্কুল স্টাফরা বসে থাকেন এবং সিঁড়ির নিচে স্টাফদের কক্ষ রয়েছে। বিমানটি প্রধান ফটক ভেঙে কক্ষের ভেতরে ঢুকে যায়। আগুনের তীব্রতায় পুরো ভবন কালচে হয়ে গেছে। ভবনের সামনের গাছগুলো পুড়ে গেছে এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সেনাসদস্যও আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের বর্ণনা:
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়েম জানান, তিনি বেলা ১টা ১০ মিনিটের পর বিকট শব্দ শুনতে পান। এ সময় তারা কলেজটির চার নম্বর ভবনের একটি শ্রেণিকক্ষে ছিলেন। দৌড়ে এসে দেখতে পান, হায়দর আলী ভবনে আগুন জ্বলছে। সায়েম জানান, তারা কয়েকজন মিলে ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, তারা কাছেও যেতে পারেননি। এ সময় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী গায়ে আগুন নিয়ে বের হয়ে আসলেও কিছু শিক্ষার্থী ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে।
সায়েম আরও বলেন, "বিমানটি ভবনের প্রধান ফটকের ভেতর ঢুকে যাওয়ায় ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীরা (বেশির ভাগ) আর বের হতে পারেনি। কারণ, ভবনটির চারপাশে লোহার গ্রিল দিয়ে আটকানো। তাই নিচে যারা ছিল তারা আর বের হতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস আসার পর আগুন নেভানোর পর গ্রিল কেটে এবং ছাদে মই দিয়ে উঠে তাদের উদ্ধার করা হয়।" এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রত্যক্ষদর্শী আরেক শিক্ষার্থী ইমাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, "ভবনটিতে ষষ্ঠ, সপ্তম এবং অষ্টম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। স্কুল একটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। আজও ছুটি হয়েছিল। কিছু শিক্ষার্থী বের হয়ে গিয়েছিল, আর কিছু শিক্ষার্থী বের হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। অনেকে আবার স্যারদের কাছে কোচিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।"
উদ্ধার অভিযান পুরোদমে চলছে এবং আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হচ্ছে।
0 মন্তব্যসমূহ
Thank you so much for your kindness and support. Your generosity means the world to me. 😊